রায়হান আলম, নওগাঁ
নওগাঁ-নাটোর আঞ্চলিক মহাসড়ক মাত্র ৮ কিলোমিটার কাজ নির্ধারিত সময় দেড় বছরে শেষ হয়নি। এদিকে সওজ বিভাগের জায়গায় মাত্র এক কিলোমিটারের কাজ শেষে করা হলেও সেই কাজ নিম্নমানের করার অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় ও পথচারিরা। বাঁকি ৭ কিলোমিটার সড়ক রেল সম্পত্তির কাজে দেখা দিয়েছে নানান জটিলতা। এদিকে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে আরও ছয় মাস সময় বৃদ্ধির আবেদন করলে সওজ বিভাগ তা বৃদ্ধি করে। তবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেও কাজ সম্পন্ন হওয়া নিয়ে শঙ্কা রয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
নওগাঁ-নাটোর আঞ্চলিক মহাসড়কের এই অংশের অনিয়ম বন্ধ করে জনসাধারণদের দূর্ভোগ থেকে রক্ষায় দ্রæত সঠিক তদারিকতায় সড়ক নির্মাণের দাবি জানানো হয়েছে। তবে নওগাঁ সওজ বিভাগ দাবি করে, কোন অনিয়ম ছাড়াই ইতোমধ্যেই ৪০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে ।
জানা গেছে, নওগাঁর সাথে ঢাকাসহ দক্ষিণ অঞ্চল, উত্তরবঙ্গের জয়পুরহাট, দিনাজপুর, পঞ্চগড়সহ অন্যান্য জেলার সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ করতে ২০০৩/০৪ সালের দিকে রেলওয়ের সম্পত্তি দিয়ে রেল এর পাশ ঘেঁষে নওগাঁ-নাটোর আঞ্চলিক মহাসড়ক নির্মাণের মহাপ্রকল্প হাতে নেয় সওজ বিভাগ। নওগাঁ-নাটোর মহাসড়ক নির্মাণের শুরু থেকে অনিয়মতান্ত্রিক ভাবে নিম্নমানের কাজ করে সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান।
গত কয়েক বছর আগে নওগাঁর অংশের মোট ৩১ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে নওগাঁ সড়ক বিভাগের আওতায় থাকা ২৯.১৯কিলোমিটার সড়কের নির্মাণ কাজ শেষে চলাচলের জন্য তা উন্মুক্ত করা হয়েছে। বাঁকি ৮ কিলোমিটার সড়ক প্রশস্ত করণের প্রকল্প গ্রহণ করে নওগাঁ সওজ বিভাগ। গত দেড় বছর আগে প্রায় সাড়ে ৫৬ কোটি টাকা ব্যায়ে নওগাঁ-নাটোর আঞ্চলিক মহাসড়কের নওগাঁর ঢাকার মোড় থেকে রাণীনগর রেল ষ্টোশন পর্যন্ত সড়ক ১৮ ফিট চওড়ার পরিবর্তে ৩৪ ফিট (চওড়া) প্রশস্তকরণ কাজের প্রকল্প আবারও নেয় নওগাঁ সওজ বিভাগ। ২০২২ সালের ডিসেম্বরের ১৪ তারিখে কাজটির কার্যাদেশ প্রদানের মাধ্যমে কাজ শুরু করে। কাজের মেয়াদ গত জুন মাসে শেষ হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ না হওয়ায় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে আরও ছয় মাস সময় বৃদ্ধির আবেদন করা হয়।
সংশ্লিষ্টদের সঠিক তদারিকতা না থাকায় ধীর গতিতে নিম্নমানের সড়কের কাজ শুরু করে সিলেটের মের্সাস জামিল ইকবাল লিমিটেড নামে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। ফলে দীর্ঘ দিন থেকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন এলাকাবাসি ও পথচারীরা।
স্থানীয় ও পথচারীরা অভিযোগ করে বলেন, নওগাঁ-নাটোর আঞ্চলিক মহাসড়কের নওগাঁর ঢাকার মোড় থেকে রাণীনগর রেল ষ্টোশন পর্যন্ত সড়কের ১ কিলোমিটার সওজ বিভাগে সম্পত্তি। এই ১ কিলোমিটার সড়কের কাজ শেষ হলেও স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, অনিয়মতান্ত্রিক ভাবে কাজ সম্পন্ন করায় সপ্তাহ পার না হতেই সড়কের এই বিভিন্ন অংশে পিচ উঠে যাচ্ছে এবং সড়কের পাশে মাটি ধ্বসে যাচ্ছে। বাঁকি ৭ কিলোমিটার চলমান কাজও নিম্নমানের করে টাকা লুটপাট করছে সংশ্লিষ্টরা। কোথাও কোন কাজের সিডিউল টাঙ্গানো নেই। সড়কের পাশে অসংখ্য পুকুর হলেও অধিকাংশ স্থানে গাইড হওয়াল দেয়া হয়নি। আবার গর্তের কাদামাটি না সড়িয়ে অধিকাংশ গর্তে বালু এবং কিছু অংশে মাটি ফেলা হয়েছে। ফলে সড়কের নীচে ভীত শক্ত হয়নি। ফলে রাস্তা দ্রæত দেবে ও ধ্বসে যাবে।
সড়কের হালহালিয়া গ্রামের আমজাদ হোসেন কাশেম সরদারসহ অনেকেই অভিযোগ করে বলেন, এই সড়ক অকেজও গত সাত-আট বছর থেকে পথ চলাচলে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। কোথাও সিডিউল টাঙ্গানো নেই, সংশ্লিষ্ট কর্তাদেরও কাজের তদারিকতা করতে দেখা যায়না। ফলে অনিয়মের মাধ্যমে কাজ শেষ করা হচ্ছে।
স্থানীয়রা আরো জানান, রেল বিভাগের সম্পত্তি হওয়ায় রেল বিভাগ থেকে লীজ নিয়ে অনেকেই দোকানপাট নির্মাণ করে ব্যবসা-বাণিজ্য করছেন। আবার অনেকেই জোরপূর্বক দখল করে রেখেছেন। এই সড়ক সম্প্রসারণ করার সময় সেই স্থানগুলো তাদের উচ্ছেদ না করেছে না। ফলে সড়ক যথাযথ সম্প্রসারণ হচ্ছে না।
মালশন এলাকায় কথা হয় আবুল বাশার, আব্দুর রহিমসহ কয়েকজন পথচারীর সাথে। তারা অভিযোগ করে বলেন, এই ১ কিলোমিটার সড়কের কাজ শেষ হলেও অনিয়মতান্ত্রিক ভাবে কাজ সম্পন্ন করায় সপ্তাহ পার না হতেই সড়কের এই বিভিন্ন অংশে পিচ উঠে যাচ্ছে এবং সড়কের পাশে মাটি ধ্বসে যাচ্ছে। বাঁকি ৭ কিলোমিটার চলমান কাজও নিম্নমানের করে টাকা লুটপাট করছে সংশ্লিষ্টরা।
রাণীনগর রেল স্টেশনের অটো রিকসার চালক মোসলিম উদ্দিন জানান, রাণীনগর থেকে সান্তাহার যাওয়ার আগের সড়কটি ছিলো বেহাল অবস্থা। সেই সড়কে গাড়ি চালিয়ে নিজের শরীরের যেমন ক্ষতি হয়েছে তেমনি ভাবে গাড়ির যন্ত্রাংশও প্রায় নষ্ট হতো। গাড়ীর দুর্ঘটনা ঘটতো।
নওগাঁ জেলা সড়ক পরিবহণ মালিক গ্রæপের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ রেজাউল মোস্তফা কালিমী বাবু জানান, নওগাঁ-নাটোর আঞ্চলিক মহাসড়ক নির্মাণ সম্পন্ন হলে নওগাঁর সাথে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দক্ষিণাঞ্চলের সাথে যোগাযোগ সহজ হবে। ফলে অর্থনৈতিক দৃশ্যপট পুরো বদলে যাবে।
নওগাঁ জেলা সড়ক পরিবহণ মালিক গ্রæপের সভাপতি শহিদুল ইসলাম জানান, এই আঞ্চলিক সড়ক দ্রæত সম্পন্ন হলে খুব কম খরচ ও কম সময়ের মধ্যে সারাদেশে মালামাল আনা-নেয়া সম্ভব হবে। দ্রæত সঠিক ভাবে এই আঞ্চলিক মহাসড়ক নির্মাণ সম্পন্ন করার দাবি জানান। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের কাউকে ঘটনাস্থলে না পাওয়ায় কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
নওগাঁ সওজ এর (সড়ক বিভাগ) নির্বাহী প্রকৌশলী রাশেদুল হক এক প্রশ্নে উত্তরে বলেন, নওগাঁ-নাটোর আঞ্চলিক মহাসড়ক নির্মাণ নিয়ে রেল ও সওজ বিভাগের দ্ব›দ্ব রয়েছে। রেলওয়ের সম্পত্তি লীজ নিয়ে সড়কের দুই পাশে বহু লোক দোকানপাট তৈরী এবং অবৈধ্য ভাবে দখল করেছেন। তাদের উচ্ছেদ করতে গেলে যদি মামলা করে তাহলে কাজ শেষ হতে আরো দেরি হবে। সড়ক নির্মাণে মেয়াদ বাড়ানো হলেও কাজ শেষ হওয়া নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।
অনিয়মতান্ত্রিক ভাবে কাজ হচ্ছে স্থানীয়দের অভিযোগ অস্বীকার করে সওজ এর কর্মকর্তা আরো বলেন, সড়ক থেকে বৈদ্যুতিক খুঁটি অপসারণ, টেলিফোন লাইনের পোল স্থানান্তর, এই সব সমস্যা সমাধান করে আমরা নির্মাণ কাজ চলমান রেখেছি। ইতোমধ্যেই ৪০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। তারপরও বর্তমানে সন্তোষজনক গতিতে আমরা নির্মাণ কাজ চলমান রেখেছি। আমি শতভাগ আশাবাদি আর কোন বড় ধরণের সমস্যা কিংবা বাঁধার সম্মুখিন না হলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই আমরা পুরো সড়কের নির্মাণ কাজ শেষ করা সম্ভব হবে। সড়ক নির্মাণ শেষ করতে রেলওয়ে বিভাগসহ স্থানীয়দের এগিয়ে আসতে হবে।
Leave a Reply